বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, আশ্বিন ১৮ ১৪৩০

মানিকগঞ্জ নিউজ ২৪ :: ManikganjNews24 - মানিকগঞ্জের খবর

মানিকগঞ্জে জীবন-জীবিকার তাগিদে পুরুষ বেসে ইজিবাইক চালাচ্ছে রুনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আপডেট: ১৮:৪৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মানিকগঞ্জে জীবন-জীবিকার তাগিদে পুরুষ বেসে ইজিবাইক চালাচ্ছে রুনা

সংগৃহীত

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। যে বয়সে পড়া-লেখা কিংবা স্বামীর সংসার করার কথা সেই সময় জীবন জীবিকার তাগিদে হাতে তুলে নিয়েছে লোহার হ্যান্ডেল। ইজি-বাইক চালিয়ে অসুস্থ বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দিচ্ছে রুনা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী।

রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পৌলি এলাকায় কথা হয় ওই তরুনীর সঙ্গে যায়যায়দিনের প্রতিবেদকের সাথে। আর্থিক অনটনে পড়া-লেখা না করায় ছোট্ট বেলা থেকেই জীবন সংগ্রামে নামেন পৌরসভার পৌলি এলাকার আলতাফ জহুরা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে ৪র্থ রুনা আক্তার(২২)।

জানা যায়, শহরের পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পৌলি এলাকায় ভাঙ্গা চারচালা ঘড়ে বসবাস করেন আলতাফ জহুরা দম্পতি এবং ছোট দুই সন্তান। বড় ছেলে কয়েক বছর আগে (আলতাফ-জহুরা দম্পতির) বিয়ে করে নিজ স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকছে। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছে আলতাফ-জহুরা তবে বার্ধক্য জনিত কারণে আগের মতো আর কোন কাজ কর্ম করতে পারছে না তারা। দিন মজুর বাবা ( আলতাফ হোসেন ) ২০১৬ সালে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে জমি বিক্রি করে, সেই টাকা দিয়ে সৌদি আরবে যায় রুনা কিন্তু পাঁ ভেঙ্গে যাওয়ায় ফিরে আসতে হয় তাকে।

বাধ্য হয়েই জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার তুলে নেন তরুনী রুনা আক্তার,প্রথম দিকে সমাজের মানুষের কাছে লাঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে তাকে। সকল বাঁধাকে পিছনে ফেলে প্রতিদিন ভোর বেলায় ভাড়া চালিত ইজিবাইক নিয়ে বেড় হন রুটি-রুজির সন্ধানে। সন্ধা গড়িয়ে রাত হলে ফিরে নিজ গৃহে। সারাদিন যে আয় হয় তার বড় একটি অংশ (পাঁচশত টাকা) দিতে হয় ইজিবাইকের মালিককে বাকি টাকা দিয়ে অসুস্থ বাবা-মা’র ঔষধ এবং সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে রুনা আক্তার।

রুনা আক্তারের বয়স্ক মা জহুরা বেগম বলেন, মেয়ে (রুনা আক্তার) বয়স হচ্ছে কিন্তু অভাব অনটের জন্য মেযেকে বিয়েও দিতে পারছি না। আমরা দুজনেই অসুস্থ, অনেক ঔষধ খেতে হয় প্রতিদিন, সেই কারনেই রুনা লোক-লজ্জার ভয় না করে এখন ইজিবাইক চালাচ্ছে। অনেক ভয় করে, মেয়ে মানুষ, তার পরও আমাদের কথা চিন্তা করে সকল ভয় মাথায় নিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ ওই বহন করে যাচ্ছে। বড় ছেলে বিয়ে করার পরপরি আলাদা হয়ে যায়,কোন সময়ও সে আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি,এখন ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়েই কোন মতে চলছে আমাদের জীবন। জানি না কবে আল্লাহ আমাদের মুখের দিকে তাকাবে এমন আক্ষেপ নিয়ে কথা গুলো বলেছেন তিনি।

রুনা আক্তার বলেন, আমি মেয়ে মানুষ তাই কি আমার কোন দ্বায়িত্ব নেই বাবা-মায়ের প্রতি,যতদিন জীবন থাকবে তত-দিন বাবা-মায়ের সেবা যত্ন করবো। তাদের সকল ভরন-পোষণ করাটা আমার একান্ত দ্বায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তারা (বাবা-মা) সারাটা জীবন আমাদের পাঁচ ভাই-বোনদের জন্য অনেক কিছু করেছে,এখন আমাদের পালা। বড় ভাই অনেক বছর আগেই বিয়ে করে আলাদা থাকেন,দুই বোনের বিয়ে বাবা দিয়েছে,এখন (বাবা) অসুস্থ, কোন কাজ করতে পারে না। তাদের-তো আর ( বাবা-মা) না খাওইয়ে মেরে ফেলা যাবে না,সে জন্য আমি কোন উপায় না পেয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছি। প্রতি দিন যে টাকা আয় করি মালিককে দিয়ে যা থাকে তা দিয়েই কোন মতে চলে যাচ্ছে আমাদের চার জনের সংসার।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ কবির হোসেন বলেন, রুনা আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তাকে এর আগে একটি ইজিবাইকের প্লেট দিয়ে ছিলাম। পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলে দেখি রুনার জন্য স্থায়ী ভাবে কোন কিছু করা যায় কিনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন:
Right Side Advertisement

সর্বশেষ

সর্বাধিক জনপ্রিয়